কুলখানি মানে কি -ইসলামে কুলখানি পালন করা জায়েজ কি না

আজকে আপনাদের মাঝে তুলে ধরব কুলখানি মানে কি-ইসলামে কুলখানি পালন করা জায়েজ কি না এ সকল বিষয়ে। কুলখানি কেন পালন করা হয় ইসলামে কুলখানি জায়েজ আছে কিনা এ সকল বিষয়ে অনেকের মধ্যে অনেক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে।অনেকেই মনে করেন,কুলখানি পালন করতেই হবে। আবার অনেকেই মনে করেন কুলখানি পালন না করলেও চলে।আসলে কুলখানি বিষয়ে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল।এ সকল বিষয়ে আপনাদের সামনে তুলে ধরার জন্য।আমাদের আজকের লেখা কুলখানি মানে কি-ইসলামে কুলখানি পালন করা জায়েজ কি না এই আর্টিকেলটি লিখলাম।
কুলখানি মানে কি -ইসলামে কুলখানি পালন করা জায়েজ কি না

সূচিপত্রঃ

  • কুলখানি মানে কি-ইসলামে কুলখানি পালন করা জায়েজ কি না
  • মৃত ব্যক্তির চল্লিশা জায়েজ আছে কিনা
  • মৃত ব্যক্তির নামে খাওয়ার অনুষ্ঠান করা যাবে কিনা
  • মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা জায়েজ কিনা
  • কুলখানি মানে কি-ইসলামে কুলখানি পালন করা জায়েজ কি না এটা নিয়ে শেষ কথা

কুলখানি মানে কি-ইসলামে কুলখানি পালন করা জায়েজ কি নাঃ

আমাদের সমাজে এখনো কিছু এমন প্রকৃতির মানুষ রয়েছে।যাদের ভেতর থেকে ভুল ধারণা গুলো কোনোভাবেই কেটে যায় না।যত ভাবে হাদিস কোরআন দিয়ে বোঝানো হয় না কেন কোনভাবেই তার ভেতর থেকে ভুল ধারণা সরানো সম্ভবই নয়।এমন প্রকৃতির মানুষ প্রায় সব এলাকায় কিছু না কিছু থাকেই। এই অল্প কিছু সংখ্যক ভুল ধারণার মানুষ আমাদের সমাজটাকে নষ্ট করে দেয়।তাদের এই ভুল ধারণার কারণে আমরা অনেক ধরনের অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য হই।কারণ মানুষ সামাজিক জীব।
 সমাজের সবাই একসঙ্গে বাস করে,ভালো খারাপ সব মানুষই একসঙ্গে বসবাস করে। মানুষ যেহেতু সামাজিক জীব। সেহেতু সবাই একসাথে এক সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে।অনেক সময় অনেক ধরনের অনুষ্ঠান সামাজিকভাবে পালন করা হয়।তেমনি একটি অনুষ্ঠান হল কুলখানি।যেটা সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে।অনেকেই মনে করেন মানুষ মারা যাওয়ার পরে তার নাম করে বিশাল একটি খাওয়া দাওয়ার অনুষ্ঠান করা উচিত কিন্তু এটার যে কোন হাদিস বা দলিল নেই।
সেটা অনেকেই বুঝতেই চায়না।মনে করে মানুষ মৃত্যুর পর তার নাম করে বিশাল আয়োজন করে খাওয়া-দাওয়া অনুষ্ঠান করলে  তার সকল পাপ মাফ হয়ে যাবে। নিঃসন্দেহে বলা যায় যে,কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ভালো খাবার দাবারের আয়োজন করে আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত করে খাওয়ানো অনেক ভালো একটি কাজ।তবে সেটা কোন মৃত ব্যক্তির নাম করে খাওয়ানো যাবে না।
কোন হাদিসে বা ইসলামে এমন কোন জায়গায় কেউ দেখাতে পারবে না যে কুলখানি করতে হবে বাএরকম কোন কিছু লেখা রয়েছে কাজেই বলা যায় যে,কুলখানি পালন করা ইসলামে জায়েজ নয়। তবে এখনো আমাদের সমাজে কিছু ভুল ধারণায় মানুষের কারণে ইসলাম বিরোধী এগুলো কাজকর্ম হয়ে থাকে।

মৃত ব্যক্তির চল্লিশা জায়েজ আছে কিনাঃ

আমাদের জন্ম যখন হয়েছে মৃত্যু অবশ্যই হবে। মৃত্যু মানে হল শোকের ছায়া বা দুঃখের ছায়া।কোন বাড়িতে যদি একজন মানুষ মারা যায় তবে সেই বাড়িতে দুঃখের ছায়া নেমে আসে।যদিও আমরা জানি জন্ম নিলে মৃত্যুবরণ করতেই হবে।তারপরেও সাময়িকভাবে কষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক।একজন মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার প্রতি কিছু দায়িত্ব থাকে।যেমন-তাকে গোসল করানো,কাফনের কাপড় পরিধান করা,জানাজা করা এবং তাকে কবর দেওয়া।
মৃত ব্যক্তির যদি সন্তান থেকে থাকে তাহলে সেই সন্তানরা মৃত পিতা-মাতার জন্য দোয়া করবেন। সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া বা পিতামাতার জন্য সন্তানের দোয়া কখনো বিফলে যায় না আল্লাহ পাক এই দোয়া কবুল করে নেন। কিন্তু আমাদের সমাজে আমরা মৃত ব্যক্তিকে ঘিরে বিশাল কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করি।যেমন কুলখানি,চল্লিশা,জিয়ারত নানা ধরনের অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।এগুলো ইসলাম সমর্থন করে না। 
কোন মানুষের যদি সন্তান মারা যায় তাহলে তার মুখের সামনে ভালো খাবার দাবার রাখা হলে,সেই মা-বাবা ভাল খাবার দেখলে তার মৃত সন্তানের কথা মনে করে আরও বেশি কষ্ট পায় বা কোন সন্তানের যদি পিতা-মাতা মারা যান তাহলে তার মুখের সামনেও কোন ভালো খাবার রাখলে সে সন্তানেরাও মনে মনে অনেক কষ্ট পায়। কাজেই মৃত ব্যক্তিকে ঘিরে এসব কুলখানি চল্লিশা জিয়ারত এই সকল কিছু জায়েজ নয়।


মৃত ব্যক্তির নামে খাওয়ার অনুষ্ঠান করা যাবে কিনাঃ

কুলখানি মানে কি-ইসলামে কুলখানি পালন করা জায়েজ কি না এ সকল বিষয় নিয়ে আমাদের অনেকের মনের মধ্যে অনেক ধরনের প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। অনেকে বুঝেও এসব কুলখানি পালন করে। আবার অনেকে হয়তো বুঝে না বা হাদিস সম্পর্কে জ্ঞান নেই তারাও পালন করে। একজন মানুষ যখন মারা যায় তখন তার প্রতি আমাদের কিছু দায়িত্ব থাকে।সে দায়িত্ব গুলো হল-সেই মৃত ব্যক্তিকে পাক-পবিত্রভাবে গোসল করানো,কাফনের কাপড় পরিধান করানো এবং তাকে সঠিক নিয়ম মেনে জানাজা করে কবর দেওয়া এবং তার জন্য আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে দোয়া করা।
এছাড়া আর অন্য কোন দায়িত্বের কথা হাদিসে আসেনি।আমরা আমাদের মনগড়া কিছু দায়িত্ব পালন করি।যেমন-মৃত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠান করি এবং সেই অনুষ্ঠানে আত্মীয়-স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশীকে দাওয়াত করে খাওয়ানো হয় কিন্তু এ সকল কর্মকাণ্ড হাদিস কোনভাবেই সমর্থন করে না। 
এমনও অনেক জায়গায় আছে মৃত ব্যক্তির বাড়ির লোকজন যদি গরিব হয় তাহলে আশেপাশের সবাই বা আত্মীয়-স্বজন সবাই মিলে টাকা পয়সা তুলে সে কুলখানির অনুষ্ঠান পালন করে। তারা মনে করে মৃত ব্যক্তির জন্য এই কুলখানি এবং চল্লিশা বা জিয়ারত এগুলো হয়তো অনেক সওয়াবের কাজ। তবে কেউ যদি মৃত ব্যক্তির নামে নিয়ত করে।কোন গরীব দুঃখী বা এতিম অসহায়দের খাবারের ব্যবস্থা করে তবে সে ক্ষেত্রে জায়েজ আছে।কিন্তু বড় দুঃখের বিষয় হলো।
আমাদের সমাজে মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে বিশাল এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং সে অনুষ্ঠানে ধনী-গরিব বিভিন্ন শ্রেণীর আত্মীয়-স্বজন সকলকেই দাওয়াত করে আনন্দ উল্লাস করা হয়।এতে করে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন,ছেলে-মেয়ে, বাবা-মা তাদের কি অবস্থা হয় সেটা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।হয়তো সমাজের দায়ে বা মানুষের কথা শোনার ভয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন করতে বাধ্য হয়।

মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা জায়েজ কিনাঃ

আমাদের সমাজের বর্তমানে একটা পরিচিত বিষয় হল,অসুস্থ বা বৃদ্ধ পিতা মাতা থেকে তাদের সন্তানরা দেখাশোনা করে না।এজন্য আমাদের দেশে বা বিভিন্ন দেশে বৃদ্ধাশ্রম নামে একটি আশ্রম গড়ে উঠেছে। এখন কথা হলো যে,বৃদ্ধাশ্রমে অসুস্থ বৃদ্ধ পিতামাতাকে রাখা হয়।এই বৃদ্ধাশ্রম গুলোর দিকে তাকালেই বুঝা যায় সন্তানরা পিতামাতার কতটুকু দেখাশুনা করে বা খোঁজখবর রাখে। 
আবার একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় যে বয়সের ভারে কুজো হয়ে গেছে বৃদ্ধ পিতা-মাতা কিন্তু তারপরেও তাদেরকে পরিশ্রম করে খেতে হয়।বৃদ্ধ মাকে রান্না করে খেতে হয় বা বৃদ্ধ বাবাকে নানা ধরনের কাজকর্ম করে খেতে হয়।তাহলে তাদের সন্তানরা থেকে কি লাভ।অনেক সন্তান আছে বিয়ে করে তাদের আলাদা সংসার নিয়ে তারা ব্যস্ত পিতা-মাতার দিকে তাকানোর সময় নেই। 
কিন্তু যখনই এই পিতা-মাতা মারা যায় তখন তারা সে পিতা-মাতার জন্য জিয়ারত,কুলখানি,চল্লিশা বা মৃত্যুবার্ষিকী করার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে। কোথায় আছে মানুষ দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝেনা।ঠিক তেমনি বাবা-মা যখন বেঁচে থাকে তখন তাদের খেয়াল রাখার সময় সন্তানদের হয় না কিন্তু যখন তারা মারা যায় তখন তারা দুঃখে,শোকে তাদের জন্য নানা রকমের জিয়ারত বা মৃত্যুবার্ষিকা করে থাকে।মনে করে যে এগুলো করলেই হয়তো তাদের বৃদ্ধ পিতা-মাতা কবরে সুখে শান্তিতে থাকবে। 
আবার বৃদ্ধ পিতা মাতা বেঁচে থাকতে তাদের প্রতি যে অবহেলা করেছে হয়তো এগুলো করলে তাদেরও পাপ কিছুটা কমবে কিন্তু এ ধারাগুলো একেবারেই ভুল।কারণ এগুলো মৃত্যুবার্ষিকী,কুলখানি,চল্লিশা হাদিস কখনোই সমর্থন করে না।এগুলো হাদিসের বাহিরে।

কুলখানি মানে কি-ইসলামে কুলখানি পালন করা জায়েজ কি না এটা নিয়ে শেষ কথাঃ

কুলখানি মানে কি-ইসলামে কুলখানি পালন করা জায়েজ কি না এটা নিয়ে শেষ কথা বলতে গেলে বলতে হয় যে,কুলখানি,জিয়ারত,চল্লিশা,মৃত্যুবার্ষিকা এগুলো ইসলাম সমর্থন করেনি।কাজে এগুলো আমরা করবো না।মৃত ব্যক্তির জন্য আমাদের যে দায়িত্ব সেটা হল।একজন মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে,তখন তাকে সুন্দর করে পাক পবিত্র ভাবে গোসল করানো,কাফনের কাপড় পরিধান করানো,জানাযায় শরিক হয়ে তাকে কবর দেওয়া।
এই দায়িত্ব গুলো আমার সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করব এবং মৃত ব্যক্তির জন্য আমরা আল্লাহ পাকের দরবারে শাফা চাইবো।আর যদি কেউ চান যে তার পিতা-মাতা বা সন্তান যে মৃত্যুবরণ করেছে তার জন্য কোন কিছু খাওয়াতে।তাহলে গরীব-দুঃখী, অসহায় বা এতিমদের খাওয়ান বা মসজিদ মাদ্রাসাতে সাধ্যমত দান করুন,হয়তো এগুলো কিছুটা হলেও মৃত ব্যক্তির সাফার কারণ হতে পারেন আল্লাহপাক যদি চান।
কুলখানি মানে কি-ইসলামে কুলখানি পালন করা জায়েজ কি না এ সকল বিষয় নিয়ে আপনাদের জন্য অনেক আলোচনা করলাম। কুলখানি নিয়ে কোন কিছু জানতে হলে অবশ্যই আমাদের আর্টিকেলটি ভিজিট করুন।
#কুলখানি মানে কি 

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)